Ads

ভারতীয় স্টক মার্কেটের নিয়ন্ত্রক পরিবেশ | Regulatory And Rules In Indian Stock Market?

ভারতীয় স্টক মার্কেটের নিয়ন্ত্রক পরিবেশ  Regulatory And Rules In Indian Stock Market
  Regulatory And Rules In Indian Stock Market 

ভারতীয় স্টক মার্কেট একটি সুসংহত ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত হয়। এখানে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনি কাঠামো রয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদান করে এবং বাজারের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করে।

মুখ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাঃ- 

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI):

গঠিত হয়ঃ ১৯৮৮ সালে, ১৯৯২ সালে আইনগত ক্ষমতা পায়।
দায়িত্বঃ- 
  • বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
  • বাজারে স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
  • স্টক এক্সচেঞ্জ এবং মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রণ।
  • কোনো অবৈধ কার্যকলাপ বা ইনসাইডার ট্রেডিং প্রতিরোধ।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI):
  • আর্থিক বাজারের সঙ্গে জড়িত কিছু কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
  • বিদেশি মুদ্রা প্রবাহ এবং পোর্টফোলিও বিনিয়োগের তত্ত্বাবধান করে।
ইন্ডিয়ান কোম্পানিজ অ্যাক্ট, ২০১৩:
  • এটি কোম্পানির গঠন, শাসন, এবং পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা নির্ধারণ করে। 

আইনি কাঠামোঃ- 

SEBI অ্যাক্ট, ১৯৯২:
  • SEBI-র কাজকর্ম এবং ক্ষমতা নির্ধারণ করে।
  • বাজারে ন্যায্যতা এবং সুশাসন বজায় রাখার নীতিমালা নির্ধারণ করে।
সিকিউরিটিজ কনট্রাক্টস (রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ১৯৫৬ (SCRA):
  • স্টক এক্সচেঞ্জগুলির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
  • স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের জন্য নিয়ম এবং শর্তাবলী নির্ধারণ করে।
ডিপোজিটরিস অ্যাক্ট, ১৯৯৬:
  • বিনিয়োগকারীদের শেয়ার এবং সিকিউরিটিজ ইলেকট্রনিক আকারে সংরক্ষণে সহায়তা করে।
  • দুইটি ডিপোজিটরি: National Securities Depository Limited (NSDL) এবং Central Depository Services Limited (CDSL)।
স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নিয়ন্ত্রণঃ 
  • ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE):এই দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ভারতে স্টক লেনদেনের প্রধান প্ল্যাটফর্ম।
  • SEBI দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
ডেরিভেটিভস মার্কেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডসঃ
  • ডেরিভেটিভস লেনদেনের জন্য পৃথক নিয়মাবলী রয়েছে।
  • মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিগুলি SEBI-র নিয়ম অনুসরণ করে পরিচালিত হয়।

বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষাঃ- 

ইনভেস্টর এডুকেশন এবং প্রোটেকশন ফান্ড (IEPF):
  • বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়ানো এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে জানানো।
গ্রিভান্স রিড্রেসাল সিস্টেমঃ 
  • SEBI এবং স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। 

নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জসমূহঃ- 

ইনসাইডার ট্রেডিংঃ 
  • অতি গোপন তথ্য ব্যবহার করে শেয়ার কেনা-বেচার অনৈতিক কার্যকলাপ।
পনজি স্কিম এবং চিট ফান্ডঃ 
  • প্রতারণামূলক বিনিয়োগ পরিকল্পনা যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে।

নতুন প্রযুক্তি এবং সাইবারসিকিউরিটিঃ- 

  • ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাইবার হুমকির মোকাবিলা।
ভারতীয় স্টক মার্কেটে SEBI-র ভূমিকাঃ- 

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) ভারতীয় শেয়ারবাজার এবং সিকিউরিটিজ মার্কেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি ১৯৯২ সালে আইনগত ক্ষমতা পায় এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, বাজারে স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা বজায় রাখতে কাজ করে। SEBI শেয়ারবাজারের বিভিন্ন অংশগ্রহণকারী যেমন বিনিয়োগকারী, ব্রোকার, কোম্পানি, এবং অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।

SEBI-র প্রধান ভূমিকাঃ 

বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা- 
  • বিনিয়োগকারীদের অধিকার রক্ষা এবং প্রতারণা বা অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করা।
  • সাধারণ মানুষকে সঠিক বিনিয়োগ পদ্ধতি এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা।
  • ইনভেস্টর এডুকেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন ফান্ড (IEPF)-এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।
বাজারের উন্নয়ন- 
  • ভারতীয় শেয়ারবাজারে আধুনিক প্রযুক্তির প্রবর্তন করা।
  • বৈশ্বিক মান অনুযায়ী বাজার অবকাঠামোর উন্নয়ন।
  • নতুন আর্থিক পণ্য এবং পরিষেবা চালু করা।
  • বিনিয়োগকারীদের জন্য ইলেকট্রনিক ট্রেডিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বাজারের নিয়ন্ত্রণ- 
  • স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিপোজিটরি, এবং ক্লিয়ারিং হাউজগুলির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা।
  • শেয়ারবাজারে ম্যানিপুলেশন এবং ইনসাইডার ট্রেডিং প্রতিরোধ করা।
  • শেয়ারের মূল্য সংক্রান্ত অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলির উপর নজরদারি করা।
  • শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
নতুন ইস্যুর তত্ত্বাবধান- 
  • নতুন শেয়ার বা সিকিউরিটিজ ইস্যু করার ক্ষেত্রে নিয়মাবলী নির্ধারণ করা।
  • IPO (Initial Public Offering) এবং অন্যান্য ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিগুলি যাতে বিনিয়োগকারীদের সঠিক তথ্য প্রদান করে তা নিশ্চিত করা।
  • প্রমোটারদের অনৈতিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা।
মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ন্ত্রণ- 
  • ব্রোকার, সাব-ব্রোকার, মিউচুয়াল ফান্ড, এবং ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কার্যক্রমের উপর নজর রাখা।
  • মধ্যস্থতাকারীদের লাইসেন্স প্রদান এবং তাদের নীতিমালা অনুসরণ নিশ্চিত করা।
  • কোনো মধ্যস্থতাকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখা- 
  • ইনসাইডার ট্রেডিং, প্রাইস ম্যানিপুলেশন এবং প্রতারণামূলক কার্যক্রম রোধ করা।
  • বাজারে জাল সিকিউরিটিজ এবং ভুয়া কোম্পানিগুলির কার্যক্রম বন্ধ করা।

SEBI-র মূল কার্যক্রমের ক্ষেত্রঃ- 

প্রাথমিক বাজার (Primary Market):
  • নতুন শেয়ারের ইস্যু এবং বিক্রির নিয়ন্ত্রণ।
  • IPO এবং FPO-এর সময় তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
দ্বিতীয়িক বাজার (Secondary Market):
  • স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচার তদারকি।
  • বাজারে শৃঙ্খলা এবং লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
মিউচুয়াল ফান্ডঃ
  • মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিগুলির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ।
  • বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের পণ্য যাচাই করা।
ডিপোজিটরি এবং ডেরিভেটিভসঃ 
  • ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ।
  • ডেরিভেটিভস লেনদেনের জন্য নীতিমালা তৈরি।
SEBI-র  ক্ষমতাঃ
  • তদন্ত ক্ষমতাঃ কোনো অনিয়ম দেখা দিলে তদন্ত করা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান।
  • শাস্তি আরোপঃ প্রয়োজন অনুযায়ী জরিমানা আরোপ বা ব্যবসার অনুমোদন বাতিল করা।
  • আইন প্রয়োগঃ SEBI অ্যাক্ট, SCRA এবং কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) এর ভুমিকাঃ- 

রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। RBI-এর প্রধান ভূমিকা হল ব্যাংকিং সেক্টর এবং শেয়ার বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এবং এটি বিভিন্ন নীতিমালা এবং নির্দেশিকা প্রণয়ন করে যা বাজারের কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।

RBI-এর প্রধান ভূমিকাঃ 
  • নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্বাবধানঃ RBI শেয়ার বাজারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এবং বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। এটি বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা এবং নির্দেশিকা তৈরি করে।
  • অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাঃ RBI দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা শেয়ার বাজারের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • বাজারের স্বচ্ছতাঃ RBI বাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন নিয়ম এবং বিধি প্রণয়ন করে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায়।
  • বাজারের উন্নয়নঃ RBI শেয়ার বাজারের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে, যেমন নতুন আর্থিক পণ্য এবং পরিষেবার প্রবর্তন।
  • বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষাঃ RBI বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যাতে তারা নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারে।
এইভাবে, RBI ভারতের শেয়ার বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভারতের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সময় করের বিষয়ঃ-

ভারতের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সময় করের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু মূল পয়েন্ট তুলে ধরা হলোঃ- 

লং টার্ম এবং শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইনঃ 
  • যদি আপনি শেয় ার বাজারে ১২ মাসের বেশি সময় ধরে শেয়ার ধরে রাখেন, তাহলে তা লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন (LTCG) হিসেবে গণ্য হয়। LTCG-এর উপর ১০% কর প্রযোজ্য, যদি গেইন ১ লক্ষ টাকার বেশি হয়।
  • ১২ মাসের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করলে তা শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইন (STCG) হিসেবে গণ্য হয় এবং STCG-এর উপর ১৫% কর প্রযোজ্য।
ডিভিডেন্ড ট্যাক্স:
  • শেয়ার থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডের উপর ১০% ট্যাক্স প্রযোজ্য, যা কোম্পানি দ্বারা সরাসরি কেটে নেওয়া হয়।
ট্যাক্স সেভিং ইনভেস্টমেন্টঃ 
  • কিছু বিনিয়োগ যেমন ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (ELSS) এবং পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) ট্যাক্স সেভিংসের জন্য উপযুক্ত। ELSS-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে ১.৫ লক্ষ টাকার পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়।
নেট ট্রেডিং লাভঃ
  • শেয়ার বাজারে লেনদেনের মাধ্যমে অর্জিত লাভের উপর করের হিসাব রাখতে হবে। এটি আপনার মোট আয় হিসেবে গণ্য হবে এবং আপনার করের স্ল্যাব অনুযায়ী কর দিতে হবে।
কর রিটার্ন ফাইলিংঃ
  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্জিত আয়কে সঠিকভাবে রিপোর্ট করতে হবে এবং সময়মতো কর রিটার্ন ফাইল করতে হবে।
এইভাবে, ভারতের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সময় করের বিষয়টি বুঝতে এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে উপরের পয়েন্টগুলো মাথায় রাখা উচিত।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Section